সারাদেশ

হরিণাকুণ্ডুতে গ্রামীণ তাঁত শিল্প হুমকীর মুখে 

 
হরিণাকুণ্ডুতে গ্রামীণ তাঁত শিল্প হুমকীর মুখে  জনসংযোগ

ইনছান আলী, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি 

ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলাতে ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প হলো তাঁতশিল্প। উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের তাঁতের গ্রাম নারায়নকান্দী, ভবানীপুর এবং ভায়না ইউনিয়নের বাকচুয়া গ্রাম তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত। ঝিনাইদাহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার লালন শাহ এবং বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন তথা বাঙ্গালী জাতির দুইশত বছরের দ্বাসত্বের শিকল ভাঙ্গার আন্দোলনের সেই মহানায়ক বিপ্লবী বাঘাযতীন এর জনপদ ভবানীপুর, বাকচুয়া,রায়পাড়া ভাতুড়ে, ভুয়েপাড়া, বৈঠাপাড়া, নারায়নকান্দী তাঁতীদের মাঝে বর্তমানে চরম হতাশা বিরাজ করছে। একদিকে তাঁত শিল্পের উৎপাদন কাজের প্রয়োজনে কাঁচামাল সূতা,রং রাসায়নিক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই উপজেলার তাঁত শিল্পের অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। জৌলুস হারিয়ে যাচ্ছে তাঁত শিল্প। কাঁচামালের দাম বাড়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক তাঁত শিল্প। লোকসানে পড়ে পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছে অনেকেই। দারিদ্র্যতার চাঁদরে মুড়ানো এই জনপদের অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত মালিক ও তাঁত শ্রমিক বেকার হয়ে বিকল্পদিকে ধাবিত হচ্ছে। 

ঐতিহ্যবাহী এই তাঁতশিল্প রক্ষায় সবধরনের সূতা ও কাঁচামাল তাঁত গবেষণা স্থাপন করা, তাঁত বস্ত্রের বাজার তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ প্রান্তিক তাঁতিদের সুদমুক্ত ঋণ ব্যবস্থা করা হলে হরিণাকুণ্ডু’র তাঁতিরা ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য বলে জানান ১ নং ভায়না ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হোসেন তুষার। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর

উপজেলা পরিসংখ্যান তদন্ত কর্মকর্তা সুরুজজামান জানান ২০১৮ সালের তাঁত শুমারি হয়। এতে দেখা গেছে এপর্যন্ত উপজেলাতে ১৪১ টি তাঁতি পরিবার আছে। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক আনুমানিক হরিণাকুণ্ডু উপজেলাতে ৩ শত থেকে ৪ শত তাঁত পরিবার রয়েছে। এই তাঁতের সাথে এখানকার উৎপাদিত বিভিন্ন বাহারী ডিজাইনে গামছা অনেক উন্নত মানের। যাহা চুয়াডাঙ্গা,আলমডাঙ্গা,কুষ্টিয়া, পোড়াদাহ বাজারে বে-সরকারী উদ্দ্যোগে রপ্তানি হয় বলে তাঁতীরা জানান। এক্ষেত্রে সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা নাই। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে এসব এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা বেশীরভাগ তাঁত শিল্পের উপরেই নির্ভরশীল। নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প। 

তাঁতীদের অভিযোগ,সূতা,রং, কেমিক্যাল সহ তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের সকল উপকরনের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি উৎপাদন ব্যয় যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সে অনুযায়ী উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। অপার সম্ভাবনার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি যদি সরকারী ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা যায় তাহলে প্রতি বছর এই শিল্প থেকে হাজার হাজার টাকা বৈদেশিক মূদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। ফলে আরো সমৃদ্ধশালী হবে জাতীয় অর্থনীতি। 

এ বিষয়ে উপজেলার ৩ নং তাহেরহুদা ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত উদ্দ্যোগতারা খুবই অস্বচ্ছল। আমি সরকারী উর্ধবতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্শন করছি। প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই উদ্দ্যোগতারা আমাদের এই কুঠির শিল্পকে জাতীয় অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।

তাঁত শিল্পের নানা বিষয়ে তুলে ধরতে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা এঁর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এই উপজেলাতে বেশকিছু তাঁতশিল্প আছে আমি শুনতে পেরেছি। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগীতা থাকবে। খুব শিগ্রহী সরজমিনে গিয়ে এই তাঁত শিল্পটাকে পরিদর্শন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর

 
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker