দেশ সংযোগ

কুসিকের মেয়র পদে উপনির্বাচন উৎসব-উৎকণ্ঠার ভোট আজ

 
কুসিকের মেয়র পদে উপনির্বাচন উৎসব-উৎকণ্ঠার ভোট আজ জনসংযোগ

কুমিল্লা প্রতিনিধি :- আব্দুল্লাহ

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ। ইতোমধ্যে ভোটের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সরঞ্জামাদি, নেওয়া হয়েছে সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অপেক্ষা এখন ভোট উৎসবের। তবে এই নগরীর ভোট নিয়ে একদিকে যেমন রয়েছে উৎসবের আমেজ, অপরদিকে রয়েছে কিছুটা উৎকণ্ঠাও। চার মেয়র প্রার্থীর তিনজনই সেই উৎকণ্ঠার কথা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, নির্বাচন প্রভাবমুক্ত না হলে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতিই আমরা সম্পন্ন করেছি। শুক্রবার সকাল থেকেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন শুরু হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে এই উপনির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়া অনুষ্ঠিত হলেও ভোটের মাঠে প্রার্থীতায় আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চার নেতা। এর মধ্যে সাবেক দুইবারের মেয়র ও বিএনপির সাবেক নেতা মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি প্রতীক), মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা (বাস প্রতীক), মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম (হাতি প্রতীক) এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া প্রতীক) প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
ভোটার ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন চার প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায়ও সেরকমই আঁচ পাওয়া গেছে। বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে প্রচারণা। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) প্রচারণার শেষ দিনেও চার মেয়র প্রার্থী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেছেন। শুক্রবার (৮ মার্চ) তারা দিনভর আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন কেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা-কর্মীদের সাথে। মেলানোর চেষ্টা করেছেন ভোটের কাঙ্খিত হিসাব-নিকাশ।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৪শ ৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ১৮হাজার ১শ ৮২ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ২শ ৭৪ জন। এছাড়াও হিজড়া ভোটার রয়েছে ২জন। ১০৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে স্থায়ী ভোট কক্ষ ৬শ ১৬টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ রয়েছে ২৪টি।
নির্বাচন কমিশন থেকে ভোট উপলক্ষ্যে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটের দিন এবং পরের দিনও দায়িত্ব পালন করবেন তারা। ২৭ টি ওয়ার্ডে ১০৫ কেন্দ্রের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ১ টি করে ২৭ টি পুলিশের মোবাইল ফোর্স, প্রতি ৩ ওয়ার্ডে ১ টি করে ৯ টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ২ টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং, র‌্যাবের ২৭ টি টীম এবং ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনে সংঘটিত অপরাধ আমলে নেওয়া ও সংক্ষিপ্ত বিচারকার্জ সাধনে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ৯ জন বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে ৪ জন অস্ত্রসহ পুলিশ, ২ জন অস্ত্রসহ আনসার ও ১০ জন লাঠিসহ নারী ও পুরুষ আনসার ভিডিপি সদস্য থাকবেন।
জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ভোট ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় এবং কেন্দ্র প্রহরায় ৫ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা তিন প্রার্থীর: এদিকে নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিন মেয়র প্রার্থী। এ প্রসঙ্গে টেবিলঘড়ি প্রতীকের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, প্রতিদিন রাত ১২টার পরে বিভিন্ন এলাকায় আমার কর্মীদের বাসায় গিয়ে বাস প্রতীকের সমর্থকরা হুমকি ধমকি দেয়, খারাপ ব্যবহার করে। ভোটের দিন এলাকায় না থাকার জন্য বলে। এরকম চলতে থাকলে তো ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকবে না।
ঘোড়া প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেনন, কুমিল্লা সিটির সবগুলো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এতোদিন যারা কুমিল্লার মানুষের সম্পদ লুট করেছে তারাই এখন আবার ভোট লুট করতে চায়। কিন্তু আমি চাই ভোটাররা যেন শান্তিতে ভোট দিতে আসতে পারে। প্রশাসন যেন কঠোর থাকে। নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান কুমিল্লায় এসে আমাদেরকে সুষ্ঠু ভোটের কথা বলে গেছেন, আমরা তার কথায় আশ্বস্থ হয়েছি। ভোটের দিন যেনো নির্বাচন কমিশনারের কথার প্রতিফলন ঘটে।
হাতি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম জানান, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারা সুষ্ঠু ভোট প্রতিহতের অপচেষ্টা চলছে। ভেতরে ভেতরে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলে তো এমন হবার কথা নয়। সবাইকে কুমিল্লায় ভোটযুদ্ধের পাশাপাশি স্নায়ুযুদ্ধ এবং পেশীশক্তির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে ভোটের দিনি নির্বাচনি পরিবেশ বিঘিœত হবার শঙ্কা রয়েছে।
তবে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশের কথা জানিয়ে বাস প্রতীকের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা জানান, ভোটের দিন নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, সিটি নির্বাচনও হবে। যারা বিভিন্ন শঙ্কার কথা বলছেন – তারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে জেলা প্রশাসন ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। শঙ্কা নয়- বরং উৎসবমুখর নিরাপদ নির্বাচন হবে কুমিল্লায়।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটির যাত্রার পর ২০১২ সালের প্রথম নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফজল খানকে হারিয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়র হন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে পরাজিত করেন তিনি। ২০২২ সালের ১৫ জুন তৃতীয় নির্বাচনে আরফানুল হক রিফাত মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। গেলো বছরের ১৩ ডিসেম্বর আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যুর পর মেয়র পদে এই সিটির উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন ঘিরে বেশকিছু প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র কিনলেও দাখিলের পর চার প্রার্থী টিকে থাকেন ভোট যুদ্ধে। যাচাই-বাছাই শেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রচারণায় নেমে পড়েন প্রার্থীরা। ৭ মার্চ পর্যন্ত বিরামহীন প্রচারণা চালান তারা। সেই প্রচারণায় তারা ভোটারদের কতটুকু আকৃষ্ট করতে পেরেছেন- তার প্রমাণ পাওয়া যাবে আজ ভোটগ্রহণের পর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর

 
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker