সারাদেশে সংবাদদাতা নিয়োগ চলছে

দেশ সংযোগ

নিষিদ্ধ পন্য তামাক বিক্রির নামে বরকলে অর্ধকোটি টাকার চাঁদাবাজি

নিষিদ্ধ পন্য তামাক বিক্রির নামে বরকলে অর্ধকোটি টাকার চাঁদাবাজি জনসংযোগ

 

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বরকল উপজেলাতে বর্তমানে চরম অভিশাপে পরিনত হয়েছে তামাক চাষ।পাহাড়ি এই অঞ্চলের মোট চাষযোগ্য জমির ৮৫.৫৬ শতাংশ জমিই তামাকের দখলে।দিন দিন এই চাষের প্রবনতা আরো বাড়ছে।সেই সাথে উজার হচ্ছে বন।কারন তামাক পাতা পক্রিয়াজাত করার জন্য চুল্লির কাঁচামাল হিসেবে প্রতিছর কয়েক লক্ষটন কাঠ পুড়িয়ে ধ্বংস হচ্ছে এসব এলাকার বন।বরকলে বর্তমানে ভুষনছড়া ইউনিয়ন , আইমাছড়া ইউনিয়ন ও বরকল সদর ইউনিয়নের কুরকটিছড়ি ও সুবলং এর বরুনাছড়ির কিছু এলাকাতে চলছে এই তামাক চাষ।

সেই সাথে বাড়ছে চাঁদাবাজি। কতিপয় তামাকচাষী ও মাঠপর্যায়ে কাজ করা সুপারভাইজার এবং লেবার সর্দার সহযোগীতায় উক্ত চাষে জড়িত চাষীদের জিম্মি করে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকার চাদা আদায় করে এই সিন্ডিকেট।

এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটে নি।অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারো প্রায় তিন শতাধিক চাষী ৫,৫০০টাকা করে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকার মত হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি।

এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,বরকলের ব্রিটিশ টোব্যাকো কোম্পানির সুপারভাইজার মোঃ ফারুখ এই চাদা উত্তলনে প্রধান হোতা।তার হয়ে স্থানীয় চাষীদের থেকে টাকা উত্তলনের কাজটি তদারকি করছেন কজন সুবিধাভোগী তামাক চাষী।

চাষীদের থেকে টাকা আদায়ের ক্ষেত্রেও এদের রয়েছে বিশেষ কৌশল।তারা চাদার পরিমান নির্ধারণ করে দিলেও সরাসরি টাকা নিজেরা নেয় না।তাদের হয়ে এই টাকা কালেকশ করেন লংগদু উপজেলার মাইনীঘাটের লেবার সর্দার আবুল।মুলত অত্র এলাকায় উৎপন্ন তামাক বিক্রির জন্য বোটে করে প্রথমে লংগদু উপজেলার মাইনীঘাটে নিতে হয়।সেখান থেকে লেবারদের মাধ্যমে উক্ত মাল ট্রাকে পরিবহন করে খাগড়াছড়ির কোবাখালিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে নেয়া হয়।তাই কোবাখালি ও বরকলের মধ্যবর্তী মাইনীঘাটেই উত্তোলন করা হয় উক্ত চাদা।চাদা পরিশোধ না করা পর্যন্ত কোন চাষীর মাল লেবাররা বোট হকে আনলোড করে ট্রাকে তুলেন না।তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রতিটা চাষীকে উক্ত চাদা দিতেই হয়।কোন চাষী যদি প্রচলিত নিয়ম না মেনে অন্যকোন উপায় অবলম্বন করতে চায় তাহলে কোবাখালিতে পৌছার পর উক্ত চাষীর নিয়ে যাওয়া পন্য রিজেক্ট করে দেয়া হয়।আর সেই রিজেক্ট করা মাল কোম্পানি ক্রয় না করায় চাষী সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।এছাড়াও এই সিন্ডিকেট ইচ্ছে করেই ওখানকার কিছু কর্মচারীদের হাত করে অনেক চাষীর সম্পুর্ন বা কিছু মাল রিজেক্ট করায়।পরবর্তীতে সেইসব মাল চাষীরা ফেলে আসলে তারা তা পুনরায় বিক্রি করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।এভাবে অত্র উপজেলার অনেক চাষী ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চাষীর মুখে এসব ভাষ্য থেকে আরো জানা যায়,অত্র চাদার একটা বিশাল অংশ তারা আঞ্চলিক অস্ত্রধারী সংগঠনকে দেয় বলে সংগ্রহ করে।এছাড়া ঋনের চাপে আটকে রেখে এরাই চাষীদের পুনরায় উক্ত চাষে যুক্ত থাকতে বাধ্য করে।

এসব প্রতিকারে প্রশাসনের এগিয়ে আসা অতিব জরুড়ি।বরকলে উকবত চাষবন্ধে তামাকপাতা পোড়ার একমাত্র কাঁচামাল কাঠ বা লাকড়ি কাটার নামে বনউজার ঠেকাতে পারলেই এই চাষের পরিমান অর্ধের কোঠায় নেমে যাবে।

 

স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজ দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। ১৮(ক) ধারায় দেশের ভবিষ্যৎ ও বর্তমান নাগরিকের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের রাষ্ট্রের দায়িত্বের কথা উল্লেখ রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় তামাক চাষ বন্ধে কার্যকর ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে রাষ্ট্রের কোনো বাধা নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান স্পিকার্স কনফারেন্সে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। প্রধানন্ত্রীর ওই ঘোষণার এতবছর পরেও তামাক চাষ বন্ধে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেই আমরা জানি।

বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তামাক চাষ বন্ধ করা জরুরি। তামাক চাষে জড়িত চাষীদের প্রণোদনার মাধ্যমে খাদ্য শস্য চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। তামাক চাষ বন্ধে কৃষি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন। কিন্তু তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কেন কৃষি মন্ত্রণালয় এখনও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না?

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি জমির সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। কৃষি জমির সঠিক ব্যবহারে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়বে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এখনই সময় তামাক চাষ বন্ধ করে খাদ্য শস্য চাষ বৃদ্ধি করার। তবেই খাদ্য দ্রব্যের আমদানি নির্ভরতা কমানো, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব।


Discover more from জনসংযোগ

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

আপনার পন্য বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন

এ সম্পর্কিত আরও খবর

Back to top button