আখেরি চাহার সোম্বা নিয়ে একটি বিষয় আমরা জানি, তা হলো এটি মুসলিম সমাজের অনেক জায়গায় উদযাপিত হয়। তবে, এটা অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমদের মতে, হারাম এবং বানোয়াট একটি দিবস। এই দিবস উদযাপন সম্পর্কে কুরআন এবং হাদীসের কোথাও কোনো নির্দেশনা নেই, বরং এই দিবস উদযাপন ইসলামী শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক।
আখেরি চাহার সোম্বা হচ্ছে হিজরী বছরের সফর মাসের শেষ বুধবারকে বলা হয়। মুসলিমদের একটি বড় অংশ এই দিনটি উদযাপন করে বিভিন্ন ধরণের কাজের মাধ্যমে, যেমন কবর জিয়ারত, বিশেষ নামাজ, দরুদ পাঠ, খাবার বিতরণ ইত্যাদি। তবে, এই সব কাজের কোনটাই ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই দিবস উদযাপনের কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ কুরআন বা হাদীস থেকে পাওয়া যায় না।
ইসলামের মূল উৎস হচ্ছে কুরআন এবং হাদীস। এই দুই উৎসে আখেরি চাহার সোম্বা পালনের কোনো নির্দেশনা বা প্রমাণ নেই। বরং নবী করিম (সা.) এবং সাহাবীদের (রাঃ) যুগে এই ধরনের কোনো উদযাপন ছিল না। ইসলামে নতুন কোনো বিধান তৈরি করা বা উদযাপন করা বেদআত হিসাবে গণ্য হয়, যা হারাম এবং কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সুরা মায়িদা, আয়াত ৩)। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ এবং সম্পূর্ণ দ্বীন। এতে কোনো নতুন কিছু যোগ করা বা কোনো নতুন আমল প্রচলন করা ইসলামিক শিক্ষার বিরুদ্ধে। আখেরি চাহার সোম্বা পালনের কোনো প্রমাণ না থাকায়, এটি একটি বেদআত হিসেবে গণ্য হয়, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে এমন কোনো নতুন বিষয় সংযোজন করে, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)। এই হাদীসটি থেকে স্পষ্ট যে, যে কোনো নতুন উদযাপন, প্রথা বা অনুষ্ঠান যা ইসলামিক শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তা বাতিলযোগ্য এবং ইসলাম থেকে বর্জনীয়। আরেকটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক বেদআত পথভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক পথভ্রষ্টতার পরিণাম হলো জাহান্নাম।” (তিরমিযী)। এই হাদীসটি থেকে বোঝা যায় যে, যে কোনো বেদআত পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায় এবং তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।
আখেরি চাহার সোম্বার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। ধারণা করা হয় যে, এটি কিছু অঞ্চল ভিত্তিক প্রথা যা ইসলাম থেকে প্রভাবিত নয় বরং স্থানীয় রীতিনীতি থেকে উদ্ভূত। এই ধরনের রীতিনীতি সাধারণত স্থানীয় সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার সাথে মিলিত হয় এবং ধীরে ধীরে ধর্মীয় রূপ নেয়। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে এর কোনো ভিত্তি নেই।
ইসলামে উদযাপন ও উৎসবের বিষয়ে খুব স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা হলো একমাত্র দুইটি ইসলামিক উৎসব যা কুরআন এবং হাদীসে প্রমাণিত। এই দুইটি ঈদ উদযাপনের জন্য ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশনা এবং উদাহরণ রয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো দিবস বা উৎসব পালনের কোনো অনুমতি ইসলামে নেই।
আখেরি চাহার সোম্বা পালনের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই দিন উদযাপন করে মুসলমানরা অপ্রয়োজনীয় এবং ভিত্তিহীন রীতিনীতির অনুসরণ করছে যা তাদের মূল ধর্মীয় শিক্ষার থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। এটি ইসলামের বিশুদ্ধতার জন্যও একটি হুমকি।
অতএব আখেরি চাহার সোম্বা পালনের কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই। এটি একটি বেদআত যা হারাম এবং ইসলামিক শিক্ষার বিপরীতে। মুসলমানদের উচিত কুরআন এবং হাদীসের প্রকৃত শিক্ষার দিকে ফিরে আসা এবং সমস্ত বেদআত থেকে বেঁচে থাকা। ইসলামে যা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা পালন করা এবং নতুন কিছু সংযোজন না করা অত্যন্ত জরুরি। ইসলামের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য আমাদের উচিত সকল বেদআত থেকে বিরত থাকা এবং ইসলামের মূল শিক্ষায় দৃঢ় থাকা।
আলিফ রহমান