দেশ সংযোগ

কাউনিয়ায় টুপি তৈরি করে স্বাবলম্বী নারীরা তৈরি টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

কাউনিয়ায় টুপি তৈরি করে স্বাবলম্বী নারীরা তৈরি টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে জনসংযোগ

কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধিঃ

কাউনিয়ায় নারীদের তৈরি টুপি এখন ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আর এতে করে গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা এবং হতদরিদ্র প্রায় ১৬ হাজার গৃহবধুদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বাড়তি আয়ে তাদের আর এখন অভাবে পড়তে হয় না। থাকতে হয় না অনাহারে, অর্ধাহারে। সুনিপুণ হাতের স্পর্শে তৈরি হচ্ছে কারুকাজ খচিত টুপি, সুই ও সুতা থেকে সরছে না কারও দৃষ্টি। কেউ ব্যস্ত টুপির ওপর নকশা বুনতে কেউবা আবার কাপড় কাটতে। রাত-দিন চলছে এমন কর্মযজ্ঞ। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই কারো। দিনের পর দিন এভাবেই একেকটি টুপি রূপ নিচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শিল্পে।

রংপুরের কাউনিয়ার সাব্দী গ্রামে ১৯৯৮ সালে টুপির কাজ নিয়ে আসেন জহির উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী। ভোলা জেলা থেকে আসা আগন্তুককে কেউ জায়গা দিতে না চাইলেও বাড়ির একটি ঘর ছেড়ে দেন মৃত আবোর উদ্দিন। সেই বাসায় থেকেই প্রথম শুরু হয় নারীদের সুক্ষ হাতের সেলাইয়ে তৈরি টুপির কাজ। শুরুর দিকে কয়েকজন নারী থাকলেও ক্রমেই তা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে এই টুপির চাহিদা বেশি থাকায় পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি জহিরকে। বর্তমানে শুধু সাব্দী গ্রাম নয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মহিলারা টুপি বানিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বি করে তুলছেন। এরমধ্যে কাউনিয়া উপজেলার খোপাতি, চানঘাট, পূর্বচানঘাট, বল্লভবিষু, ভূতছাড়া, সাব্দী, হরিশ্বর, পাঞ্জরভাঙ্গা, গদাই, তালুকশাহবাজ, নিজপাড়া, মধুপুর, ভায়ারহাট, কুটিরপাড়, শিবু, চরনাজিরদহ গ্রামের ১৬ হাজারের বেশি মহিলা এ কাজ করছেন। ভুতছড়া গ্রামের আমিছা বলেন, স্বামীর আয়ের সংসার চালাতে হিমসিম খেতাম। বর্তমানে সংসারের কাজের পাশাপাশি সেলাই করে মাসে মাসে প্রায় ৩ হাজারও বেশি টাকা আয় করি। অবসরে বসে বসে বাড়িতেই টুপির কাজ করি। কঠিন অভাব ডিঙ্গিয়ে আসা সাব্দী গ্রামের আগুরা বেগম বলেন, স্বামীর আয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। অভাব পিছু ছারে নাই, এখন টুপি সেলাইয়ের আয়ে আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। তিনি আরো জানান, শুরুর দিকে একটা টুপি সেলাই করলে ২০০ থেকে ৩০০টাকায়। বর্তমানে কাজ ভেদে টুপি সেলাই করে পাচ্ছেন ৮শ থেকে ১২শ টাকা। ক্ষুদ্র টুপি ব্যবসায়ী জজ মিয়া বলেন, আমরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মহিলাদের সুতাসহ টুপি দিয়ে আসি নকশা করার জন্য। নকশা হয়ে গেলে তা আবার ফেরৎ নিয়ে আসি টাকা দিয়ে। বিভিন্ন কারখানার সাথে আমার যোগাযোগ আছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমার কাছ থেকে এই টুপিগুলো কিনে নেয়। এতে মোটামুটি ভালই লাভ আসে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এখন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা নিজস্ব উদ্যোগে ছোট ছোট কারখানা দিয়েছেন। এসব কর্মযজ্ঞে তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান, যা এক সময়ের মঙ্গাকবলিত তিস্তাপাড়ের হতদরিদ্র হাজারো নারীকে দিয়েছে সুযোগ। জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে পাকিস্তানি টুপি শীর্ষস্থান দখল করে থাকলেও রংপুর অঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন টুপি ওমান, কুয়েত, কাতার, সৌদি ও বাহরাইনসহ প্রায় ২০টি দেশে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে। রপ্তানিযোগ্য এ শিল্পের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে বালাপাড়া ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামের টুপি ব্যাবসায়ি আঃ আউয়াল বলেন বেকার ও দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই টুপি শিল্প সচ্ছলতার পথ খুলে দিয়েছে। কর্মী ও এজেন্টদের মাধ্যমে আমরা টুপি তৈরি করে নিচ্ছি। কর্মীদের বাড়ি বাড়ি সুতাসহ টুপি দিয়ে আসি নকশা করার জন্য। প্রতি মাসে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টুপি ওমানে পাঠানো হচ্ছে। মান, আকার ও প্রকারভেদে একেকটি টুপি তৈরিতে খরচ পড়ছে ৭০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এসব টুপি ৩হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এদিকে সাহাবাজ গ্রামের টুপির এজেন্ট গোলাম রব্বানী বাবু জানান ১৩টি কেন্দ্র থেকে মাসে প্রায় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টুপি তৈরী করে বিক্রি করে। তাদের অনেকে মনে করছেন সরকারিভাবে এই শিল্পে প্রনোদনা ও সহায়তার প্রয়োজন বলে আশা প্রকাশ করেন।

আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন এখানে

এ সম্পর্কিত আরও খবর

আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন এখানে
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker